আজকে সকালে সঞ্জীব চৌধুরী (ডিসেম্বর ২৫, ১৯৬৪-নভেম্বর ১৯, ২০০৭) চলে গেলেন। খুব ছোটো একটা জীবন অনেক বেশি করে বেঁচে নিয়েছেন তিনি। তবু যদি আরো কিছুদিন থাকতেন।
আমি তখন ক্লাস টু'তে পড়ি। বাসায় ভোরের কাগজ রাখা হতো তখন। সম্ভবত প্রতি বৃহস্পতিবার ছোটোদের জন্য একটা পাতা বের হতো, ইষ্টিকুটুম। তাতে মাথাটা একটু খাটাও নাম দিয়ে নানারকম পাজল থাকতো। ওইটার সমাধান করা নিয়ে আমার ছিলো অপরিসীম আগ্রহ। প্রতি সপ্তাহে খবরের কাগজে আমার নাম থাকা চাই-ই। একদিন বাবা নিয়ে গেলো আমাকে ভোরের কাগজের অফিসে। সেইখানে সঞ্জীব চৌধুরীকে প্রথম দেখেছিলাম। বাবা কার সাথে যেন কথা বলছিলো। আমি এখানে ওখানে উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করছিলাম। উনি আমাকে দেখতে পেয়ে তুলে নিয়ে নিজের টেবিলে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী জন্য এসেছি। বললাম, মাথাটা একটু খাটাওয়ের সমাধান জমা দিতে। উনি অমনি বললেন, আচ্ছা, মাথাটা একটু খাটাও এর নাম পালটে মাথাটা একটু চুলকাও করে দিলে কেমন হয়? কারণ দেখো, মাথা খাটাতে গেলে মাথা গরম হয়ে যায়। তখন গরম মাথায় উকুনগুলি সব ছুটাছুটি করতে থাকে। তখন খুব মাথা চুলকায়। আর মাথা চুলকাতে চুলকাতে সমস্যার সমাধান করতে হয়। ওঁর কথা বলার ধরণে হেসে ফেলেছিলাম। তারপরে খুব গম্ভীর হয়ে বললাম, কিন্তু আমার মাথায় উকুন নাই, তাই আমার মাথা চুলকায় না। উনি খুব কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, কিন্তু দেখো, আমার লম্বা চুলের মধ্যে উকুন আছে তো, তাই আমার খুব মাথা চুলকায়। এই বলে সত্যি সত্যি মাথা চুলকানো শুরু করে দিলেন!
বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার গানের সাথে পরিচয় হলো। সেই গান ভাল না বেসে কি থাকা যায়? কিন্তু যখনই তাকে টিভিতে দেখতাম বা তার কথা শুনতাম, আমার মনে পড়ে যেতো, মাথাটা একটু চুলকাও-এর কথা। সাথে সাথে হেসে ফেলতাম আমি। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার এই অসম্ভব প্রিয় মানুষটার সাথে যখন জীবনে দ্বিতীয়বার দেখা হবে, তাকে আমি অবশ্যই বলবো, কেমন করে জীবনে অনেকবার তিনি আমাকে হাসিয়েছেন।
খুব অকালে চলে গেলেন তিনি। এখন আর কেমন করে বলবো আমি এই কথাগুলি তাকে? আমার জীবনের সবচাইতে বড় অপ্রাপ্তিগুলির একটি হয়ে রইলো, জীবনে আর একটি বার তার সাথে কথা বলতে না পারা। তিনি ভালো থাকুন।
ছবিঃ হাসান মাসুদ
আমি তখন ক্লাস টু'তে পড়ি। বাসায় ভোরের কাগজ রাখা হতো তখন। সম্ভবত প্রতি বৃহস্পতিবার ছোটোদের জন্য একটা পাতা বের হতো, ইষ্টিকুটুম। তাতে মাথাটা একটু খাটাও নাম দিয়ে নানারকম পাজল থাকতো। ওইটার সমাধান করা নিয়ে আমার ছিলো অপরিসীম আগ্রহ। প্রতি সপ্তাহে খবরের কাগজে আমার নাম থাকা চাই-ই। একদিন বাবা নিয়ে গেলো আমাকে ভোরের কাগজের অফিসে। সেইখানে সঞ্জীব চৌধুরীকে প্রথম দেখেছিলাম। বাবা কার সাথে যেন কথা বলছিলো। আমি এখানে ওখানে উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করছিলাম। উনি আমাকে দেখতে পেয়ে তুলে নিয়ে নিজের টেবিলে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী জন্য এসেছি। বললাম, মাথাটা একটু খাটাওয়ের সমাধান জমা দিতে। উনি অমনি বললেন, আচ্ছা, মাথাটা একটু খাটাও এর নাম পালটে মাথাটা একটু চুলকাও করে দিলে কেমন হয়? কারণ দেখো, মাথা খাটাতে গেলে মাথা গরম হয়ে যায়। তখন গরম মাথায় উকুনগুলি সব ছুটাছুটি করতে থাকে। তখন খুব মাথা চুলকায়। আর মাথা চুলকাতে চুলকাতে সমস্যার সমাধান করতে হয়। ওঁর কথা বলার ধরণে হেসে ফেলেছিলাম। তারপরে খুব গম্ভীর হয়ে বললাম, কিন্তু আমার মাথায় উকুন নাই, তাই আমার মাথা চুলকায় না। উনি খুব কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, কিন্তু দেখো, আমার লম্বা চুলের মধ্যে উকুন আছে তো, তাই আমার খুব মাথা চুলকায়। এই বলে সত্যি সত্যি মাথা চুলকানো শুরু করে দিলেন!
বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার গানের সাথে পরিচয় হলো। সেই গান ভাল না বেসে কি থাকা যায়? কিন্তু যখনই তাকে টিভিতে দেখতাম বা তার কথা শুনতাম, আমার মনে পড়ে যেতো, মাথাটা একটু চুলকাও-এর কথা। সাথে সাথে হেসে ফেলতাম আমি। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার এই অসম্ভব প্রিয় মানুষটার সাথে যখন জীবনে দ্বিতীয়বার দেখা হবে, তাকে আমি অবশ্যই বলবো, কেমন করে জীবনে অনেকবার তিনি আমাকে হাসিয়েছেন।
খুব অকালে চলে গেলেন তিনি। এখন আর কেমন করে বলবো আমি এই কথাগুলি তাকে? আমার জীবনের সবচাইতে বড় অপ্রাপ্তিগুলির একটি হয়ে রইলো, জীবনে আর একটি বার তার সাথে কথা বলতে না পারা। তিনি ভালো থাকুন।
ছবিঃ হাসান মাসুদ
5 comments:
"চোখটা এত পোড়ায় কেন? ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও/
সমুদ্র কি তোমার ছেলে আদর দিয়ে চোখে মাখাও..."
আপু, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। যারা বাংলা গান ভালোবাসে, তাদের প্রত্যকের জন্য সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যু একটা ব্যক্তিগত ক্ষতি। এই ক্ষতির কোনো ক্ষতিপূরন নেই।
অব্যক্ত এ ব্যথার শীতলতা
জানে কান্নার রঙ জোছনার ছায়া..
আপু, আপনার কাছে কি সন্জীবদার "দু:খ ব্যাথায় মনটা যে নীল, তোমার আমার না হলো মিল" এই গানটা আছে? কিংবা কোন খোঁজ দিতে পারবেন?
সরি ভাইয়া, আমি তোমার এই কমেন্টটা মিস করে গেছিলাম। আমার কাছে এই গান নাই। তবে আমি খোঁজ নিবো। কালকে বলতে পারবো। ভালো থেকো :)
Post a Comment