কিছু লিখতে অনেক ইচ্ছা করতেসে। কী লিখি? এখন আমার অফিস নাই, পরীক্ষা শেষ পড়াশুনা নাই, সারাদিন ঘুমাই, আর খাই, আর মাঝেমাঝে সিনেমা দেখি, বা দেখিনা।
আমার একটা বিড়াল আছে। জন্মের পর থেকে তার অবশ্য একই রুটিন। খায় ঘুমায়। অবশ্য মাঝেমাঝে বাইরে গেলে মাঝেমাঝে রাস্তার বিড়াল এবং উৎকট মানুষজনের হাতে মাইর খেয়ে আসে।
মাইর খাওয়া বাদ দিলে আমি এখন বিড়াল লাইফ লিড করতেসি। বাইরে যাইনা তাই মাইর খাইনা। ভালৈ।
যেহেতু সারাদিন বাসায় থাকি সেহেতু সারাদিন নেটে থাকি। ফেইসবুকে ঘুটুর ঘুটুর করি। গান শুনি। খুবই চমৎকার অলস লাইফ। আজকে তো স্নানও করিনাই। ইন ফ্যাক্ট স্নান করা লাগবে জামা পাল্টাতে হবে এই আলস্যে আড্ডাতে যাইনাই।
গতকালকে ঈদ ছিলো তাই রাস্তাঘাট ঠাণ্ডা। লোকজন সব বাড়ি চলে গেছে। এইসময়ই কেবল ঢাকাতে একটু মানুষের মতো চলা যায় কিন্তু মানুষের মতো চলে আমাদের আর অভ্যাস নাই তাই ঈদ-পরবর্তী ফাঁকা রাস্তা আমাদের কাছে অস্বস্তিকররকম ফাঁকা লাগে আর তারপরের উইক শুরু হলেই আবার যখন জ্যাম শুরু হয় তখন হাঁসফাস করে উঠি আর তক্ষুণি কোরবানির ঈদের ছুটির জন্য দিন গুনতে শুরু করি।
কোরবানির ঈদের পর চট করে দিনগুলা খুব ছোটো হয়ে যায়। ঢাকাতে খুব শীত তেমন কখনওই পড়েনা কিন্তু শীতকালে আমার কেন যেন মন খুব খারাপ থাকে। এমনকি আমার বিড়ালটিও শীতকালে রাতে বাসায় থাকে, বিছানাতে উঠে আসে, তার সামনে হাত রাখলে হাতে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
তারপর অবশেষে বছর শেষ হয়ে যায় আর আমরা বইমেলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ফেব্রুয়ারী আসলে বইমেলা শুরু হয়। তখন আমরা সব কাজ ফেলে সন্ধ্যায় বইমেলাতে থাকতে চাই। গত দুই বছর বইমেলাতে অনেককে দেখেছি। অনেক এনআরবি ব্লগ একটিভিস্ট দেশে আসে এইসময়ে। এইসব সমাগমে আমি কিছুটা বাইরের লোক কারণ কমিউনিটি ব্লগে আমার কোনো পরিচয় নাই। অমুক অমুক ব্লগার তমুক তমুক কবির বন্ধু হিসাবে পরিচয়।
বইমেলাতে বন্ধুরা অনেক বই কিনে। আমি তেমন বই কিনিনা। যেসব বই সংগ্রহ করতে চাই কেউ না কেউ গিফট দিয়ে দেয়। তবে আজকাল পরিচিত অনেকে বই বের করে তাদের কারো কারো বই কিনতে হয়।
সমস্যা হচ্ছে এতো বই পড়বো কখন। কাজ করে আলস্য করে আর কিছুই করার সময় পাইনা। না-পড়া বইয়ের স্তূপ জমতে থাকে, তাতে ধুলো জমতে থাকে। কালেভদ্রে পাঠ ইচ্ছা জাগলে অনেক বার পড়া বইয়ের অনেকবার পড়া পৃষ্ঠা খুলে বসি। বইয়ের পাঠক, গান-শুনুনি, সিনেমা-দেখুনি ফোরাম থেকে নোটিফিকেশান আসতে থাকে। মাথার মধ্যে বিজবিজ করে, কতো নাম! বিস্মিত হয়ে ভাবি, এরা এতো কিছু করে কখন?
আজকে একটা সিনেমা দেখলাম এডজাস্টমেন্ট ব্যুরো। সিনেমাটা মনেহয় গত ছয় মাস ধরে পড়ে ছিলো। কাহিনী যতো ভালো সিনেমার মেইকিং ততো ভালো লাগেনাই। ম্যাট ডিমন আমার পছন্দের অভিনেতা তবে এটি তার শ্রেষ্ঠ কাজ নয়। শেষ দৃশ্যগুলিতে নায়িকাকে বেকুবের মতো লাগে।
ফেব্রুয়ারি আমার পছন্দের মাস কারণ এসময় দিনগুলি ঊষ্ণ হয়, দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে শুরু করে। আমি ফেব্রুয়ারির কথা বলছি আর এখনি ভাবছি ফেব্রুয়ারি কবে আসবে। এপ্রিলও আমার পছন্দের মাস কারণ এসময় কৃষ্ণচূড়া খুব ফোটে। কৃষ্ণচূড়া আমার পছন্দের ফুল।
ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিলের মধ্যে আছে মার্চ মাস, এই মাসে আমার জন্মদিন থাকে। আগে জন্মদিনে কেবল বাবামা উপহার দিতো এখন বন্ধুরাও দেয়। তোমার বন্ধু বেশি হলে উপহার বেশি, বন্ধু কম হলে উপহার কম।
বন্ধু জিনিশটা অদ্ভুত। এমন অনেক প্রাণের বন্ধু আছে যাদেরকে দুই বছর আগে চিনতামওনা। দুই বছর আগে যারা আমার প্রাণের বন্ধু ছিলো তাদের অনেকের সাথে আমার অনেককাল কথা হয়নাই। বড়ো হতে হতে মানুষ হারানো সময় হারানোতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাই।
আমার এখন আর মনে নেই কে আমাকে বলেছিলো, মানুষ আসলে বেঁচে থাকে তার পরিচিত মানুষদের স্মৃতিতে। যতোদিন তার কথা মনে করার কেউ থাকে, ততোদিন একটি ব্যক্তি মরেনা। আমার তাই মনে হয় মানুষ হারালে আসলে মানুষ একটু করে মরে যায়, কারণ তার একটা অংশ হারানো মানুষটির সাথে চলে গেলো। যখন তুমি খুব বৃদ্ধ হও যখন তোমার সময়ের আর কেউ বেঁচে থাকেনা তখন তাই মনেহয় মানুষ মরার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
কিন্তু কিছু কিছু লোক বৃদ্ধ হওয়ার আগে মরে যায়। সুইসাইড করে। পাগল হয়ে যায়, পরিচিতদেরকে ভুলে যায়। স্বেচ্ছানির্বাসন নেয়। আমি কবি বিষ্ণু বিশ্বাসের কথা বলছি। গত সপ্তাহে তার উপরে লেখা এক ফেইসবুক নোটে আমার এক কবি বন্ধুকে ট্যাগ করা হয়। তাই নোটটি আমার হোমপেইজে ভেসে থাকে। লোকটি সিজোফ্রেনিক ছিলো। ২০১১ সালে আমরা সিজোফ্রেনিয়া শব্দটির সাথে ভালোভাবে পরিচিত তাই ওই ব্যক্তির সাথে সৃজনশীলতাকে এসোসিয়েট করি আমরা। আমি তার কবিতা খুঁজে বের করে পাঠ করি এবং আমার ভালো লাগে। রুদ্র কিংবা আবুল হাসানের মতো ভালো না। কিন্তু নিজের মতো করে একধরনের নিমগ্ন ভালো। এরকম কবিতা অনেক নেই।
তো, এরকম সম্ভাবনার ক্ষেত্র ছেড়ে লোকটি বিড়ালের নির্লিপ্ততায় বনবাসে চলে গেলো, ভেবে আমার তার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। ক্রিয়েটিভিটি আর উন্মাদনার মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কিনা পড়ার চেষ্টা করি। খুব ইন্টারেস্টিং জিনিশপাতি জানতে পারি। এবং বন্ধুদেরকে জানাই। ফেইসবুকে। তারাও অনেক ইন্টারেস্টিং জিনিশ জানায়। আমার মনোযোগ তখন নতুন সব ইন্টারেস্টিং জিনিশে সরে যায়। আমি বিষ্ণু বিশ্বাসকে ভুলে যাই। ঈদের ফ্যাশান ক্যাটালগ দেখি।
এই ফাঁকে দিনের দৈর্ঘ্য কমে যায়। আরেকটা বছর শেষের দিকে চলে যাচ্ছে, দেখো। আমার, বিষ্ণু বিশ্বাসের, বিড়ালের। তোমার। অকারণেই।
1 comment:
এই নিয়ে চার নম্বরবার মন্তব্য লিখতে বসলাম। প্রতিবারই বেশি গুছায়া লিখতে যায়া আর কিছুই লিখতে পারি না।
এইবার শুধু এইটুকুই বলি, এইটা আমার পড়া তোমার অন্যতম সেরা গদ্য। খুবই কনফিডেন্ট, স্মার্ট গদ্য। দুর্দান্ত !
Post a Comment